মায়ের চিঠি
রাফি আজ পাঁচ বছর পর বাড়ি ফিরছে। চাকরির চাপে একবারও আসা হয়নি। মা ফোন করতেন,
বলতেন— বাবা, একটু সময় করে আসিস। তোর জন্য পায়েস রান্না করব।
কিন্তু সে প্রতিবারই বলত— সময় পাচ্ছি না মা, পরে আসব।
আজ আর কোনো ফোন আসবে না, কোনো অপেক্ষা নেই। মা আর নেই…
বাসা পৌঁছে দরজা খুলতেই মায়ের গন্ধটা নাকে এল। সবকিছু যেমন ছিল, তেমনই আছে। শুধু মা
নেই। রান্নাঘরের হাঁড়িটা উল্টে রাখা, জানালার ধুলো জমে গেছে।
হঠাৎই তার চোখ পড়ল টেবিলের ওপরে রাখা একটা চিঠিতে। কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা—
বাবা, জানি তুই খুব ব্যস্ত। কিন্তু তোকে একবার দেখতে খুব ইচ্ছে করে।
রোজ দরজার দিকে তাকিয়ে থাকি, যদি তুই হঠাৎ এসে বলিস— ‘মা, খেতে দাও।
জানিস, তোর জন্য আজও পায়েস রান্না করেছি...
যদি কখনো সময় হয়, ফিরে আসিস, বাবা… অন্তত একবার;
চোখের জল আর আটকাতে পারল না রাফি। কাঁপতে কাঁপতে রান্নাঘরে গেল। পুরনো হাঁড়ির ঢাকনা
খুলতেই শুকিয়ে যাওয়া পায়েসের স্তর জমে আছে। মা হয়তো শেষদিনেও ভেবেছিলেন—আজ
হয়তো রাফি আসবে...
কিন্তু রাফি আসেনি।
মায়ের চিঠি || শোয়াইব আল আজাদ
শোয়াইব আল আজাদ একজন উদীয়মান লেখক, যিনি মূলত কবিতা ও ছোট গল্প লেখায় দক্ষ। তার লেখায় বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির নিপুণ প্রকাশ ঘটে। তিনি বিশ্বাস করেন, সাহিত্য বাস্তবতাকে ছুঁয়ে গেলে তবেই তা পাঠকের মনে দাগ কাটে। মানবিক অনুভূতি ও সমাজের প্রতিচ্ছবি তার লেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য। বাস্তবধর্মী ও প্রাঞ্জল লেখার মাধ্যমে তিনি পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নিচ্ছেন।