নামে নয় কর্মেই বড় হয়

  • এস এ বিপ্লব
  • Category: অনুগল্প
  • Published on: Wednesday, Apr 23, 2025

এক আটপৌড়ে  রাজার পরিবারে ( স্ত্রীর)   সন্তানাদি হয় আর মারা যায়।রাজা  তাই কবিরাজের পরামর্শ নিতে আগ্রহী হলেন। তবে  কবিরাজ পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন এবার সন্তান হলে নাম রাখবি "হাছনমুড়া"। রাজা বললেন এটা আবার কেমন নাম?আর কেমন বা শর্ত, বুঝলাম না। না, না,না  এ নাম রাখতে পারব না,অন্য নাম চাই।

রাজা: -- একটু ভাবাবেগে বলল, হাছন মুড়া মানে ঝাড়ু!  না! না এ আবার কেমন নাম?  রাজার ছেলের নাম হবে ঝাড়ু!  কবিরাজ বলল এই নামই রাখতে হবে, তুই ভেবে দেখ কি করবি।না হলে এবারও অমঙল হবে।  অনেক ভেবে চিন্তে শেষে কবিরাজের কথা মেনে নিতেই হলো। ঠিক আছে তাই হবে, যাতে সন্তানের মঙ্গল হয় বেঁচে থাকে তবে হোক সেই নাম। সন্তানের মঙ্গলের জন্য সব করব।

পরিশেষে তাই হলো, রাজার ছেলের নাম হলো হাছনমুড়া,মানে ঝাড়ু।যদিও পূর্বে এমন নাম শোনা যেত বেশি। ফালান,মধু,আঙুর, ইত্যাদি।  কিন্তু এ যুগে আবার এসব নাম পছন্দ করে না। যাই হোক, কয়েক বছর পর রাজার ছেলে যখন স্কুলে যায় আসে, এবং একটা কিশোর বযসে এসে যায়। তখন রাজার ছেলে তার এই নাম মানতে চায় না।আবার স্কুল বা আশেপাশের অনেক লোক এই নাম নিয়ে ব্যাঙাত্মক করে থাকে। পাড়ার মানুষ বলে রাজার ছেলের নাম না কি হাছনমুড়া। হাছন মুড়া মানে হলো ঝাড়ু। তারমানে হলো ঝাড়ু হচ্ছে রাজার ছেলের নাম।ছেলে এসব শুনে রাগ তরে থাকে। অথচ  ছেলে তো বোঝে না বাবা কেন এই নাম রেখেছিল। ছেলে এখন দোষ ধরে তার  নাম কেন ঝাড়ু রাখা হলো। এই নিয়ে পিতার সাথে বাক- বিতন্ডা। এবং এক পর্যায়ে ছেলে জিদ করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে আর বাড়িতে থাকবে না। চলে যাবে যেখানে দু চোখ যায়। রাজা বুঝিয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। মা সেও বুঝিয়েছে। কিন্তু কারো কোন কথা বা  বুঝ সে মানবে না। তাই রাজা আর বাধা দেয় নি। বরং সাহস দিয়েছে। যাও, ঘুরেফিরে সে নিজেই যখন শিখে আসবে, তখন সে বুঝবে।কেননা রাজা বিশ্বাস করে বাস্তবতা শুধু বইয়ে থাকে না বরং দেখেও শিক্ষা নিতে হয়।তাই রাজা নিরবে,আড়ালে জল বিয়োগ করে থাকে। কেউ দেখেনি সে জল!

হাছনমুড়া হাটতে হাটতে অন্য রাজ্যে চলে যায়। কিন্তু সেখানে ঘটতে থাকে মজার মজার  শিক্ষনীয় ঘটনা।সে যখন নতুন এলাকা ঘুরে দেখতে থাকে। তখন শুরু তেই দেখতে পেল ৬-৭ বছরের একটা শিশু বস্ত্র হীন হয়ে খেলা করছে। দেখতেও কালো আবার ধুলাবালি মাখা দেহখানি।  সন্ধ্যা হয়ে যায়, এমন সময় তার মা ডাকছে এ লক্ষ্মী ঘরে আয়।রাজার ছেলে হাছনমুড়া কথা টি শুনে অবাক হয়ে যায়।  অবাক হয়ে যায় এই ভেবে যে, এই শিশুটির নাম লক্ষ্মী!  এ কি করে সম্ভব। মনে মনে ছন্দ মিলিয়ে বলে,  আউলা উদাম অথচ লক্ষী তার নাম। এবার হাছনমুড়া আবার হাটতে গিয়ে কিছুদুর এগিয়ে আসতেই, দেখে এক লোকের একটা কুকুর তবে কুকুর টার বয়স হয়েছে। তাই দেখতে কুৎসিত দেখায়।কিস্তু লোকটি কুকুর কে ডাকছে তার দেওয়া নাম ধরে। এ বাঘা এদিকে আয়।হাছন মুড়া কথাটি শুনে তো অবাক। কারন কুকুর দেখতে এতো কুৎসিত অথচ নাম কিনা বাঘা।তাই  হাছনমুড়া অবাক হয়ে বলে, এই কুকুরের নাম বাঘা।এবার আবার ছন্দ মিলালো, ছাল নাই কুকুরের বাঘা তার নাম। এরপর আবার কিছু দুর এগিয়ে যেতেই দেখল এমন  এক গ্রাম যেখানে কোন লোকজন নেই। অথচ সবাই এই গ্রাম কে বলে মানিক নগর। ছেলেটি থ'বনে এবার আরো বেশী অবাক হয়ে গেল আরে এখানে লোক নেই অথচ মানিক নগর এই এলাকার নাম। ছেলেটি এবার ছন্দ মিলিয়ে বলছে, বসত নাই নাম তার মানিক নগর।এই বলে আবার কিছু দুর যায়,  গিয়ে দেখে এক রাখাল ছনের ঘরে বসে পান্তাভাত খাচ্ছে,হালকা মেঘ হচ্ছে যা কি না তার ঘরে পরছে।এমন সময় কে যেন ডাক দিল আর বলল এ বাদশা কাজে যাবি না। বাদশা উত্তরে বলে আসছি।হাছনমুড়া এবার আরো অবাক হয়ে যায়। সে থ' বনে হারিয়ে বলে  থাকে যে, কামলা খাটে সেই ছেলের নাম বাদশা।আর আমি রাজার ছেলে আমার নাম হয়তো চেয়ে খারাপ কিন্তু আমি তো এটা বলতে পারি যে, আমি রাজার ছেলে। অন্যের কষ্ট দেখে নিজের কষ্ট ভুলে গেছে হাছনমুড়া। তাই এরপর হাছনমুড়ার চোখ খুলে যায়। এবার সে পুরো ছন্দ গুলিকে একসাথে করে সাজিয়ে পড়ে থাকে যা থেকে আমাদের অনেক কিছু শিখার আছে।সে ছন্দ গুলি কে এভাবে সাজায়- --

আউলা উদাম লক্ষী নাম

ছাল কুত্তার বাঘা নাম

বসত নাই মানিক নগর

কামলা দেয় বাদশা ভাই

আমি হাছনমুড়া বাড়িতে

ফিরে যাই।

তারপর থেকে হাছনমুড়া সেই যে বাড়ি গেল, শুধু যায় নি বরং নিজের জীবন বদলে গেছে। এখন আর নাম নিয়ে সে লজ্জা পায় না। বাবা কে বলে থাকে তার এই নামের জন্য সে এখন গর্ব করে থাকে। বাবা- মা দুজনেই খুশী যে ছেলে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। পিতা বলে আমি জানতাম ছেলে তার ভুল একদিন বুঝতে পারবে। ওরে নামে কিছু আসে যায় না। নামে নয় কর্মেই সব হয়। সত্যি কথা বলতে কি?  আমাদের সমাজেও এমন অনেকে আছে যারা নাম আর কাম নিয়ে মাথা ঘামায়।কাম মানে, অনেকে কাজ কে ছোট করে দেখে থাকে। অথচ এদেশে যারা কাজ কে ছোট করে দেখে তারাই আবার বিদেশ গিয়ে এর চেয়েও ছোট কাজ করছে। কারন বিদেশিরা কখনো আমাকে, আপনাকে ভালো কাজ দিবে না। কিছু মানুষ আছে আবার নাম নিয়ে ব্যাঙাত্মক করে থাকে। আমাদের মনে রাখতে হবে কাজ মানুষের অভিশাপ নয় বরং আশীর্বাদ হয়।কাজে কোন লজ্জা নেই।কথায় আছে জম্ম হোক যথতথা কর্ম হোক ভালো। যেখানে কর্ম ভালো সেখানে নামে কিবা আসে যায়। সে হোক রাজার ছেলে কিংবা ভিক্ষুকের ছেলে।

 

 

 

নামে নয় কর্মেই বড় হয় || এস এ বিপ্লব

 

এস এ বিপ্লব একজন সাহিত্যানুরাগী ও সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব, যিনি কবিতা ও ছোটগল্প লেখার মাধ্যমে নিজের মনের ভাবনা প্রকাশ করতে পছন্দ করেন। সাহিত্যের চেতনা ও শব্দের মায়াজালে তিনি উচ্ছ্বসিত হন, যা তার লেখনীতে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। তার কবিতাগুলোতে মানবিক আবেগ, প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং সমাজের বিভিন্ন দিক উঠে আসে। বিপ্লবের ছোটগল্পগুলোও সমানভাবে আকর্ষণীয়, যেখানে তিনি জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও চরিত্রগুলোকে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলেন। সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে তিনি নিজেকে প্রকাশ করেন এবং সমাজের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখেন।