অদৃশ্য লোক

  • মোঃ মাহবুবুর রহমান
  • Category: ছোট গল্প
  • Published on: Wednesday, Apr 23, 2025

আজকে ঈদ। সবাই খুশি। ছোট ছেলে মেয়েরা আরো বেশি খুশি হয় । এখন বিকেল বেলা। ছোট ছেলেমেয়েরা সবাই মাঠে খেলছে।

একটা লোক এসে তাদের খেলা দেখছে। খেলা দেখার সময় একটা মেয়েকে দেখে সে। বয়স হয়তো সাত অথবা আট এরকম হবে। মেয়েটা সবার সাথে খেলছে না, একা একা বসে আছে, কেউ তাকে ডাকলে প্রথম বার তার উত্তর দিচ্ছে না। 

লোকটি একটু ভেবে সেই মেয়েটির কাছে গিয়ে বলে, তোমার নাম কি মা? মেয়েটি বলে, আমার নাম মরিয়ম। লোকটি তখন বলে, তোমার কি মন খারাপ? মরিয়ম উত্তরে বলে, না। লোকটি আবার বলে, তোমার মা কি বকেছে ? মরিয়ম বলে,না, বকেনি। এমন সময়,

মরিয়মের চাচাত বোন মিথিলা এসে বসে তাদের কাছে।

লোকটি তখন আবার বলে, তাহলে তুমি নিশ্চুপ কেন? তোমার সাথেকার সবাই খেলছে আর তুমি এখানে একা একা বসে আছো কেন? লোকটি একটু হেসে বলে, ও বুঝতে পারছি, এবার ঈদে তোমাকে নতুন জামা কিনে দেয় নাই তোমার বাবা‌। সেজন্য তোমার মন খারাপ। ঠিক না। 

মরিয়ম বলে না, সেজন্য আমার মন খারাপ না। মরিয়মের পাশ থেকে মিথিলা বলে, আপনি কাকে কি বলছেন? আপনি জানেন ও এবার ঈদে কয়টি জামা পেয়েছে ? মোট চারটি। একটা আমার আব্বা অর্থাৎ ওর চাচা দিয়েছে, একটা ওর মামা দিয়েছে, একটা ওর খালা দিয়েছে আর একটা ওর ফুফু দিয়েছে।

লোকটি আশ্চর্য হয়ে বলে, এতগুলো জামা পেয়েছো তাও কিসের জন্য তোমার মন খারাপ। তোমার কি হয়েছে আমাকে খুলে বলো?

মরিময় বলে, আসলে আমার বাবার জন্য মন খারাপ।

লোকটি বলে, কেন তোমার বাবার জন্য মন খারাপ? তোমার বাবা কি করেছে? মরিয়ম কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে, আমার বাবা কিছু করে নি। তখন পাশ থেকে মিথিলা বলে, ওর বাবা মারা গেছে। মরিয়মের চোখে তখন পানি।

লোকটির মুখে আর কথা আসে না।লোকটি তখন কাতর স্বরে বলে, "ও"। মরিয়ম তখন কেঁদে কেঁদে লোকটিকে বলে, আমার এর আগের 

একটা ঈদ জামা ছাড়াই কাটিয়েছি। কিন্তু এতটা খারাপ লাগে নাই। আমি আমার একটাও জামা চাই না। আমি আমার বাবাকে চাই।

 

 

 

অদৃশ্য লোক || মোঃ মাহবুবুর রহমান

 

মোঃ মাহবুবুর রহমান একটি সাধারণ পরিবারের সন্তান, যিনি তার সাদামাটা জীবনযাপনেই আনন্দ খুঁজে পান। ছোটবেলা থেকেই তিনি সাধারণ পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন এবং সেই শিকড়কে ধরে রাখতেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। লেখালেখির প্রতি তার বিশেষ ভালোবাসা রয়েছে। তিনি বেশ কিছু কবিতা ও ছোট গল্প রচনা করেছেন, যা তার চিন্তা-চেতনা এবং অনুভূতির প্রকাশ। মোঃ মাহবুবুর রহমানের এই সাহিত্যচর্চা তার জীবনের এক অনন্য দিক, যা তাকে আরও সুন্দর ও সমৃদ্ধ করে তুলেছে।